মাদরাসা, রিফর্ম ও মুসলিমদের জ্ঞানতাত্ত্বিক কলোনাইজেশন

মূলঃ ফয়সাল মালিক । অনুবাদঃ আরমান ফিরমান

Arman Firman
26 min readSep 1, 2020

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

Generation Islam নামের ২০০৯ সালের একটা CNN ডকুমেন্টারির এক অংশে পাকিস্তানের ইসলামী শিক্ষার ব্যাপারে বলা হয়,

অনেক মাদরাসা ইসলামের এমন এক ভার্সন শিক্ষা দেয় যা অতিতে আটকে আছে। শিক্ষার্থীদের গণিত বা বিজ্ঞান পড়ানো হয় না বললেই চলে…

ডক্যুমেন্টারিতে পরবর্তীতে এক NGO কর্মীর প্রশংসা করা হয় এ বলে যে,

…পাকিস্তানের মাদরাসাগুলোকে মডার্নাইজ করার সংগ্রামে…[1]

ডক্যুমেন্টারিতে মাদারিস[2] এর এমন চিত্র প্রদর্শন করা হয়, যেন সেটা প্রি-মডার্ন মুসলিম কালচারের একটা অংশঃ অতীত কালে আটকা পড়া, বর্তমানের সাথে সম্পর্কহীন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্বের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত — এটা অনেক বড় একটা ডিসকোর্স এর অংশ যা বিভিন্ন মিডিয়া আউটলেট, থিঙ্ক ট্যাংক, বুদ্ধিবৃত্তিক সার্কেল, আর সরকারি প্রতিষ্ঠানের[3] মাঝে দেখা যায় যা মুসলিম বিশ্বের শিক্ষাগত সমস্যা গুলোকে ‘মডার্নাইজেশন’ এর অভাব রূপে প্রদর্শন করে। এই পজিশন থেকে, মুসলিম বিশ্বে মানুষদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণের অপারগতাকে[4] তারা মডার্নিটির সাথে খাপ খাওয়াতে না পারা হিসেবে দেখায়।

এই “Tradition vs Modernity” ন্যারেটিভ কে অনেক ইতিহাসবিদ ও অ্যাকাডেমিক সাপোর্ট করেছেন যারা দেখাতে চেয়েছেন যে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মুসলিম সভ্যতার ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলাপমেন্টে খুবই স্বল্প ভূমিকা রেখেছে।[5] এই ন্যারেটিভ, অবশ্য, আরও অনেক ইতিহাসবিদ, অ্যাকাডেমিক, ইন্টেলেকচুয়াল আর স্কলারদের দ্বারা প্রতিহত হয়েছে বিগত বছরগুলোয়।[6] তবু অবশ্য, মাদরাসার মত ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোর আউটডেটেড হয়ে যাওয়ার ধারণা এখনও অধিকাংশ দ্বারা প্রদর্শিত। আগেকার বিভিন্ন রিসার্চার ও ইন্টেলেকচুয়ালদের অনুসরণে এই পেপারের উদ্দেশ্য হলঃ বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে শিক্ষার যে দুর্দশা, তার মূল কারণ কোনভাবেই ইসলামী ট্রেডিশান না; বরং কলোনিয়াল পিরিয়ডের বিভিন্ন ডেভেলাপমেন্ট।

বর্তমানের মুসলিম বিশ্বে শিক্ষা পদ্ধতি যে পুরাতন হওয়ার জায়গায় বরং অনেকটা মডার্ন, এটা প্রমাণ করার জন্য আমি মুসলিম বিশ্বে স্কুলিং এর ফিলসফিকাল ফাউন্ডেশান ও এসব শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর কলোনিয়ালিস্ম এর প্রভাব পরীক্ষা করবো। কন্টেক্সট বোঝার জন্যঃ মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন শিক্ষা ব্যাবস্থা ইসলামী ভাবধারা কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে। আল্লহর একত্ববাদ (তাওহিদ), নবুয়ত, আখিরাত — ট্রেডিশনাল মুসলিম সমাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকার দিতে ও টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। ইউরোপিয়ান কলোনাইজেশনের উত্থানের সাথে, ১৮শ শতক থেকে শুরু করে মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা ব্যাবস্থা একটা র‍্যাডিকাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। ইউরোপিয়ান কলোনিয়ালিস্ম মুসলিম বিশ্বে এমনসব শিক্ষার থিওরি নিয়ে আসে, যা সেক্যুলার ভাবধারায় আটকে ছিল। এই নতুন শিক্ষা ব্যাবস্থার সামনে পুরাতন শিক্ষা ব্যাবস্থা ফিকে হয়ে যায়। সমস্যা জাগ্রত হয়, খুব স্বাভাবিক ভাবেইঃ এই নতুন স্কুলিং সিস্টেম এমন জ্ঞানতত্ত্ব ও ভাবধারা নিয়ে হাজির হয়েছিল যা মুসলিমদের কাছে অপরিচিত ছিল, যা মুসলিম বিশ্বে এমন এজুকেশনাল ক্রাইসিস সৃষ্টি করে যার প্রভাব থেকে মুসলিম বিশ্ব আজ পর্যন্ত মুক্ত হতে পারেনি।

এই পেপারে নির্দিষ্ট ভাবে আমি তিনটি দিকের উপর আলোকপাত করবোঃ

১) মুসলিম বিশ্বে স্কুলিং এর ফিলসফিকাল ফাউন্ডেশন

২) মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর কলোনিয়ালিস্ম এর প্রভাব

৩) মুসলিম বিশ্বে শিক্ষাগত সংস্কার এর একটা এক্সপ্লোরেশন

মুসলিম বিশ্বে স্কুলিং এর দার্শনিক ভিত্তি

ইকরা! ঐশ্বরিক আদেশ ও জ্ঞান

ইসলামে শিক্ষা আলোচনা করতে গিয়ে মুসলিম ঐতিহাসিকরা সাধারণত মুহাম্মাদ (স) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের প্রথম আয়াতসমূহ উল্লেখ করে থাকেন। কুরআনের প্রকাশিত প্রথম শব্দ হচ্ছে একটা আদেশ ইকরা! যার অর্থ ‘পড়’! এর পরের আয়াতগুলো দেখে আমরা বলতে পারি যে ইসলাম তার শুরু থেকেই ঐশ্বরিক আদেশের মাধ্যমে জ্ঞান অন্বেষণকে গুরুত্ব দিয়েছে (৯৬:১); মানুষদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কলমের কথা উল্লেখ করে শিক্ষাহার বৃদ্ধির কথা বোঝানো হয়েছে (৯৬:৪); পরীক্ষণযোগ্য পৃথিবী অধ্যায়ন করার জন্য আলাক্ব থেকে মানুষের উৎপত্তির কথা উল্লেখিত হয়েছে (৯৬:২);[7] আরে শেষে, জ্ঞান আহরণের সাথে আল্লাহকে বোঝার ব্যাপারটা কানেক্ট করা হয়েছে (৯৫৬:১-৫)।[8]

জ্ঞান আহরণের ডাক সমস্ত কুরআন জুড়েই দেখা যায়। এমনকি ‘ইল্‌ম শব্দটা এবং এর রূপগুলো কুরআনে ৮০০ বারের বেশি এসেছে[9] এবং আল্লাহ শব্দের পড়ে এটি কুরআনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রিপিটেড শব্দ।[10] কুরআনীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সত্যিকার জ্ঞান কেবল তথ্য না যা মানুষ, সমাজ, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজে লাগানো যায়; বরং, সত্যিকার জ্ঞান হচ্ছে তা, যা একজন মানুষকে পরিবর্তন করে তাদের অস্তিত্বের বুৎপত্তি ও উদ্দেশ্যের সাথে সংযুক্ত করে এবং চিন্তার মহাবিশ্বের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে দেয়। ইসলামী ফ্রেমওয়ার্কে জ্ঞান অন্বেষণকে ঐশ্বরিক আদেশ আর মানব অস্তিত্বের অধিবিদ্যাগত বাস্তবতা — প্রাপ্ত-নৈতিকতা থেকে আলাদা করা যায় না।[11]

প্রতিষ্ঠানগত জ্ঞান অন্বেষণের বেলায় মুসলিম জাতিতে শিক্ষার জন্য আরবি ভাষায় এই তিনটি টার্ম ব্যবহার হওয়া শুরু হয়ঃ

১) তা’লিমঃ যার রুট এর অর্থ জানা, জ্ঞাত হওয়া, শিখা, দেখে বোঝা।

২) তারবিয়্যাঃ যার রুট এর অর্থ বৃদ্ধি করা, বাড়ানো, লালন করে বড় করা।

৩) তাদিবঃ যার রুট এর অর্থ আদবী, পরিশুদ্ধ, ভালো চরিত্রের।[12]

এই কনসেপ্ট গুলো দ্বারা একজন ইসলামী ওয়ার্ল্ডভিউ এর মধ্য থেকে সচেতনতা, বেড়ে উঠা, এবং পরিশুদ্ধতার ধারণার শিক্ষাগত প্রসেস বের করে আনতে পারে।

মুসলিম বিশ্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উত্থান

মুহাম্মাদ (স) এর জীবদ্দশায় সাহাবীদের শিখা ও জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করা হত। জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব এত বেশি ছিল যে মুসলিমদের প্রথম প্রধান যুদ্ধ অর্থাৎ বদরের যুদ্ধে, যখন মক্কার কাফিররা হেরে যায়, কিছু যুদ্ধবন্দীদের মুহাম্মাদ (স) বলেন যে, তারা ১০ জন শিশুকে লেখতে ও পড়তে শেখালে মুক্তি পেতে পারে।[13] প্রথম মুসলিম সমাজে শিক্ষা ও শিখানো প্রাইভেট গৃহে হত যেমন ইবনু আরকামের গৃহে; পরবর্তীতে মসজিদে শিক্ষাদান শুরু হয়।[14] মসজিদ ছিলে শিক্ষার ডেভেলপমেন্টের প্রথম স্তর, পরে শিক্ষার জন্য আরও অনেক জটিল ধরণের প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে।[15] সময়ের স্রোতে আর ওয়াক্‌ফের বদৌলতে মাদরাসার উদ্ভব হয়, যা মুসলিম বিশ্বে বৃহৎ অর্থে শিক্ষার দ্বার খুলে দেয়।[16] ১১শ শতকের সালজুক এম্পায়ারের উজির, নিজামুল মুল্ক এর সময় মাদরাসা সিস্টেমের উজ্জ্বল কাল শুরু হয়[17] আর পরবর্তীতে অটোমানদের আগমনে আরও উন্নত হয়ে উঠে।[18]

মাদরাসা ক্রমেই মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে যায় এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে তা এভেইলেবল হয়ে উঠে। এমন রেকর্ড আছে যে, মামলুক শাসনে কায়রো আর দামিষ্কে মহিলাদের জন্য আলাদা মাদরাসা ছিল আর ১৩শ শতকে বয়স্ক, বিধবা আর তালাকপ্রাপ্তা নারীদের জন্য আলাদা শিক্ষা ব্যাবস্থা ছিল।[19] মুসলিম স্পেইনে কেবল করডোবা তেই ১৭ টা ইউনিভার্সিটি, ৭০ টা পাবলিক লাইব্রেরি ছিল যেখানে হাজার হাজার বই ছিল।[20] এমন রিপোর্ট আছে যে ১৪শ ও ১৫শ শতকে শুধু দিল্লিতেই প্রায় ১০০০ মাদারিস ছিল এবং শিক্ষা সবার জন্য সম্ভব ছিল, এমনকি দাসদের জন্যও।[21] মুঘল সাম্রাজ্যে অনেক অমুসলিমও মাদারিস আর মাকাতিবে ভর্তি হত।[22] ১৮৫৭ সালের এক কলোনিয়াল অফিশিয়াল পাঞ্জাবের মাদরাসাগুলোতে হিন্দু শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখে চমৎকৃত হয়ে গিয়েছিলেন।[23] ১৮শ শতকে কায়রোর ইউরোপিয়ান টুরিস্টরা অবাক হত এটা দেখে যে এত বিশাল পরিমাণ জনগোষ্ঠী শিক্ষিত।[24] আলজেরিয়ার দখলদারিত্বকালে ফ্রেঞ্চ রিসার্চাররা লক্ষ্য করেছিলেন যে আলজেরিয়ার শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সংখ্যা ফ্রান্সের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী থেকে বেশি (১৯শ শতক)।[25] এগুলো বিস্তৃত মাদরাসা নেটওয়ার্ক থেকে নেওয়া কেবল কয়েকটা উদাহরণ। তো, এখন প্রশ্ন জাগেঃ মাদরাসাগুলোতে ঠিক কিসব পড়ানো হত?

আল-মা’কুল ওয়া আল-মানকুলঃ যুক্তিগত ও প্রবাহগত জ্ঞান

মুসলিম বিশ্বে শিক্ষা ব্যাবস্থা বুঝতে গেলে আমাদের এ ব্যাপারে জ্ঞাত হতে হবে যে, পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে ধর্মীয় ও সেক্যুলার জ্ঞানের মধ্যে বিভাজন করে, ট্রেডিশনাল মুসলিম সমাজ সেটা করে না। মুসলিম জাতিতে দ্বীনকে দেখা হত বাস্তবতার এক সামগ্রিক ব্যাবস্থা হিসেবে যেখানে কার্যকারণ ও যৌক্তিক চিন্তাভাবনা পবিত্র জ্ঞানের সাথে সংযুক্ত ছিল। মাদারিসের শিক্ষানীতি সাধারণভাবে দু ভাগে বিভক্ত ছিলঃ উলুম আল-মা’কুল (আকলি জ্ঞান [মস্তিষ্কপ্রসূত] — rational sciences) ও উলুম আল-মানকুল (নাকলি [ওয়াহয়িপ্রসূত] জ্ঞান — transmitted sciences)।[26] যেগুলো সাবজেক্ট কে বর্তমানে সেক্যুলার সাবজেক্ট ধরা হয়- যেমন ম্যাথ, মেডিসিন — ট্রেডিশনাল মুসলিম সমাজে সেগুলো উলুম আল-মা’কুল এর মধ্যে পড়বে।[27] এটা আমাদের বুঝতে হবে যে, উলুম আল-মা’কুল এর অনেক সাবজেক্ট (যেমন গণিত, চিকিৎসা ইত্যাদি) কে যদিও বর্তমানে সেক্যুলার সাবজেক্ট হিসেবে দেখা হবে, মুসলিম বিশ্বে সেসব একটা ইসলামিক প্যারাডাইম এর মধ্যে প্র্যাকটিস করা হত। মুসলিম সমাজ কখনও দ্বীন থেকে কোন শিক্ষা বিষয় কে আলাদা করার প্রয়োজন বোধ করে নি যার জন্য উলুম আল-মা’কুল কে দ্বীনি শিক্ষার একটা উপশাখা হিসেবে দেখা হত আর মুসলিম চিন্তাবিদরা সায়েন্টিফিক রিসার্চ কে দ্বীনি সত্য এবং আল্লাহর সৃষ্টি বোঝার একটা মাধ্যম হিসেবে দেখতেন।[28]

অবশ্য, এই সাবজেক্ট গুলো অর্থাৎ মেডিসিন, অ্যাস্ট্রনমি ও বর্তমানের অন্যান্য বিজ্ঞানের ব্যাপারে এটা বলা যে এসব একটি ইসলামিক প্যারাডাইমের মধ্যে থাকতো — অনেকের কাছে উদ্ভট লাগতে পারে — কিন্তু এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে, কোন বিষয়ই আসলে নির্দিষ্ট প্যারাডাইম আর ভাবধারার বাইরে শিখানো সম্ভব না। ওয়েস্টের সেক্যুলার ইউনিভারসিটিগুলোতে শিক্ষা দেওয়া অসংখ্য সাবজেক্টের জন্য যদিও ইউনিভার্সালিটি দাবী করা হয়, গভির পর্যবেক্ষণ দ্বারা বোঝা যায় এসব বিভিন্ন ধরণের প্যারাডাইম আর ভাবধারার মধ্যে আটকে আছে — সেটা হতে পারে পজিটিভিস্ম, রিডাকশানিস্ম, রেলেটেভিস্ম, হিস্টোরিসিস্ম ইত্যাদি।

মুসলিম জাতির উজ্জ্বল সময়ের কয়েকজন ব্যক্তিত্বের দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে মুসলিমরা কিভাবে জ্ঞানের প্রতি একটা সমন্বয়মূলক অ্যাপ্রোচ প্রতিষ্ঠা করেছিল যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল ধর্ম, যুক্তি, বিজ্ঞান, নৈতিকতা, আর অধিবিদ্যা।

ইবনু সিনা তাত্ত্বিক দর্শন কে পদার্থ ও গতির সাথে সম্পর্কিত করে তিন ভাগে বিভক্ত করেনঃ প্রাকৃতিক, গাণিতিক, ও ধর্মতাত্ত্বিক/অধিবিদ্যাগত।[29] তিনি এসবকে সেক্যুলার ও ধর্মীয় হিসেবে দেখেননি; বরং আরও বৃহৎ ফ্রেমওয়ার্ক এর মাঝে ক্ষুদ্র শাখা-প্রশাখা হিসেবে দেখেছেন। এটা উল্লেখযোগ্য যে, ইবনু সিনা বিশ্বাস করতেন ধর্মতত্ত্ব/অধিবিদ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান আর প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহ নিম্নতম পর্যায়ের জ্ঞান।[30] কিন্তু এটা তাকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে অবদান রাখা থেকে ঠেকিয়ে রাখেনি। আমরা ভালোভাবেই জানি যে তার মেডিসিনে করা কাজ শত শত বছর ধরে ইউরোপে স্ট্যান্ডার্ড টেক্সটবুক ছিল।[31]

বিখ্যাত ধর্মতাত্ত্বিক আবু হামিদ আল-গাযালি, যিনি ইবনু সিনার পরবর্তী জেনারেশনেই ছিলেন, মেডিসিন ও ম্যাথ এর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে এইসব বিজ্ঞান স্টাডি করা ফার্দ আল-কিফায়া। সমাজের উন্নয়নের জন্য যে যেসব বিষয়ে পারদর্শিতা প্রয়োজন যেমন চিকিৎসা, গণিত, কৃষি ইত্যাদি — ইমাম গাযালির জন্য সেসবই ফার্দ আল-কিফায়া আর মুসলিম সমাজে কিছু মানুষের অবশ্যই সেসব বিষয় এক্সপারটিজ থাকা লাগবে।[32]

১৪শ শতকের হিস্টোরিয়ান ও সোশিওলজিস্ট ইবনু খালদুন তার মুকাদ্দিমা তে সে সময়ে মুসলিম বিশ্বে যেসব সাবজেক্ট পড়ানো হত সেসবের একটা লিস্ট করেছিলেন। উলুম আল-মা’কুল এর মধ্যে অন্তর্গত বিভিন্ন বিষয় ছিলঃ যুক্তিবিদ্যা, পদার্থবিজ্ঞান, পাটিগণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, বীজগণিত, আলোকবিজ্ঞান ইত্যাদি।[33] তিনি লক্ষ্য করেন যে গণিত অত্যন্ত দামি একটা সাবজেক্ট ছিল আর শিক্ষার্থীদের অনেক কম বয়স থেকেই গণিত পড়ানো হত।[34] এটাও উল্লেখযোগ্য যে, ইবনু খালদুন লক্ষ্য করেন মুসলিম জাতির শুরু থেকে তার সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সাবজেক্টকে কেন্দ্রীভূত করে শিক্ষার্থীদের উপর কুরআনের এক বিশাল প্রভাব ছিল।[35] মুসলিম বিশ্বে শিক্ষার কেন্দ্রে কুরআন থাকা ও শিক্ষার্থীদের উপর এর গভির প্রভাবের ভালো একটা উদাহরণ হল ইংল্যান্ড এর রয়াল আফ্রিকান কম্পানির একজন কর্মকর্তা ফ্রান্সিস মুর। তিনি ১৭৩০ দশকে লক্ষ্য করেন যে সেনেগাম্বিয়া অঞ্চলের মানুষরা, ইউরোপিয়ানরা ল্যাটিনে যে পরিমাণ দক্ষ ছিল তার চেয়েও (কুরআনের কারণে) আরবিতে বেশি দক্ষ ছিল।[36] ইবনু খালদুনের এই রেকর্ড, যেখানে এতসব সাবজেক্ট পড়ানো হচ্ছে কুরআন কে কেন্দ্রে রেখে, এটা দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় মুসলিমরা বিজ্ঞান ও ধর্মের মাঝে কোনরকম বিরোধ দেখতে পেত না।

বিজ্ঞান, যুক্তি ও ওয়াহয়ি এর এই কেন্দ্রীভূত অ্যাপ্রোচ এমনসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জন্ম দেয় যা জ্ঞান অন্বেষণ ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে যায়। ৯ম থেকে ১২শ শতকের মাঝে আরবি ভাষায় পৃথিবীর অন্য যেকোন ভাষা থেকে অধিক বৈজ্ঞানিক লেখালেখি হয় — দর্শন, চিকিৎসা, ইতিহাস, জ্যোতির্বিদ্যা আর ভূগোল — এইসব সাবজেক্টের উপর।[37] আব্বাসি শাসনামলে সায়েন্টিফিক রিসার্চ প্রায়ই সরকার দ্বারা সাপোর্টেড থাকতো[38] আর বাইতুল হিকমা অত্যন্ত বিখ্যাত একটা অবজারভেটরি, রিসার্চ, আর লার্নিং সেন্টার ছিল।[39] সালজুক আমলে হাসপাতাল আর জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণাগার মাদরাসার সাথে সংযুক্ত থাকতো।[40] অটোমানদের সময় চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হত।[41] যেমনঃ সুলতান সুলেইমান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত Sulimaniye Medical Madrasa। মুঘল শাসক আকবরের শাসনামলে রাষ্ট্রীয় আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে প্রত্যেকের গণিত, কৃষি, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান আর যুক্তিবিদ্যা শিখতে হবে অন্যান্য সাবজেক্টের সাথে।[42] ১৮শ শতকের স্কলার মুল্লাহ নিযামুদ্দিন সাহলাভি দারস-এ-নিযামী নামক একটি শিক্ষা কারিকুলাম উদ্ঘাটন করেছিলেন যা শত শত মাদরাসায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ছিল মৌলিকতা — পাঠে অন্তর্ভুক্ত ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাস্ট্রনমি আর চিকিৎসাবিজ্ঞান।[43]

মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর কলোনিয়ালিস্ম এর প্রভাব

মুসলিম জাতির উন্নয়ন পৃথিবীর অন্যান্য জাতি থেকে আলাদা হয়ে হয়নি; বরং বিভিন্ন জাতির সাথে সংযোগ মুসলিম জাতিকে রূপ দিতে সাহায্য করে আর প্রতিদান স্বরূপ মুসলিম বিশ্ব থেকেও তারা অনেক কিছু পায়। মুসলিম জাতির এই প্রভাব ইউরোপের উপর ভালোভাবেই পড়ে আর যথেষ্ট পরিমাণ সংস্কৃতিগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক দেওয়ানেওয়া কলোনিয়ালিস্ম এর আগেই হয়ে যায়। এর একটা ভালো উদাহরণ হচ্ছে পশ্চিমে ইউনিভার্সিটির উত্থান, যা মুসলিম বিশ্ব থেকে প্রভাবিত হয়ে হয়, বিশেষ করে মুসলিম স্পেইন এর প্রভাবে। ইউরোপের মন্টপেলিয়ে, পাদুয়া, আর পিসায় গড়ে তোলা সেরা ও বিখ্যাত মেডিকাল স্কুলগুলো ছিল করডোবার মেডিকাল স্কুলগুলোর প্যাটার্নে তৈরি।[44] মুসলিম বিজ্ঞানীদের করা রিসার্চ ও লেখাসমূহ ইউরোপে শত শত বছর ধরে স্টাডি হয়েছে। ৮ম শতকের রসায়ন বিজ্ঞানী জাবির বিন হাইয়ানের কাজ[45], ইবনু সিনার চিকিৎসাবিজ্ঞানে কনট্রিবিউশান[46], ১০ম শতকের সার্জারি মাস্টার আল-যাহরাউয়ীর কাজ[47], আর ১৩শ শতকের ফার্মাকোলজিস্ট ইবন আল-বায়তার[48] কেবল কয়েকটা উদাহরণ যা বিভিন্ন ইউরোপিয়ান ভাষায় অনূদিত হয় এবং অত্যন্ত প্রভাবশালি হয়ে উঠে। এরপরে, কলোনিয়াল পরিবেশ এসে এই মিউচুয়াল এক্সচেঞ্জ এর আবহাওয়াকে একটিমাত্র ডমিন্যান্স ও অন্যদের তার বাধ্যবাধকতায় নিয়ে আসে। আর, মুসলিম বিশ্বে শিক্ষা পদ্ধতির বিশাল পরিবর্তনের একটা মূল কারণ কলোনিয়ালিস্ম।

কলোনিয়ালিস্ম ও জ্ঞানতত্ত্বের আত্মহত্যা

১৫শ শতকের শেষের দিকে আল-আন্দালুস/মুসলিম স্পেইনে ক্যাথোলিক রাজতন্ত্রের আক্রমনের শেষ পর্যায় চলছিল।[49] আর মুসলিমদের শারীরিক গণহত্যার সাথে দিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক গণহত্যাও হয়ে যায় তখন, যাকে গ্রসফুগেল বলেছেন epistemicide।[50] মুসলিম আর ইহুদিদের এক বিশাল সংখ্যাকে খুন করার পর লাইব্রেরি সমুহকে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার উৎসব শুরু হয়।[51] পরবর্তীতে কলোনিয়াল যুগের পলিটিকাল বিভীষিকার সমান্তরালে যে বুদ্ধিবৃত্তিক কলোনাইজেশন হয়, তার পূর্ববার্তা ছিল লাইব্রেরিগুলোর আগুনে ভস্মীভূত হওয়া।

সেক্যুলারাইজেশন এর সাথে দিয়ে ইউরোপ একটা হোমোজিনাইযিং ফোর্স হয়ে উঠে; যা প্রগতির নাম দিয়ে নিজেদের ইন্টেলেকচুয়াল ট্রেডিশান সারা বিশ্বের অন্যান্য জাতির উপর চাঁপাতে শুরু করে। এনলাইটেনমেন্ট পিরিয়ডের হার্টে থাকা এই সেক্যুলার এপিস্টেমোলজি অন্যান্য জাতির জ্ঞানতাত্ত্বিক ব্যাবস্থা ধ্বংসের মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠে।পলিটিকাল ইম্পিরিয়ালিস্ম এর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক কলোনাইজেশন। বিজ্ঞান, এনলাইটেনমেন্ট পিরিয়ডে ন্যাচারালিস্ট ফিলসফির সাথে সেক্যুলারাইজড হয়ে যায় আর একে সত্য জানার এক অনন্য ইউনিভার্সাল পদ্ধতি হিসেবে দেখানো হতে থাকে। মিলিটারির প্রধানের কলোনিয়াল প্রজেক্টে যে গুরুত্ব ছিল, ধীরে ধীরে পশ্চিমা বিজ্ঞানীদেরও এই প্রোজেক্টে সে গুরুত্ব তৈরি হয়ে যায়।[52] এই দাবী, যে ওয়েস্ট অন্যান্য সব জাতির তুলনায় সেরা জ্ঞানতাত্ত্বিক ব্যাবস্থা নিয়ে এসেছে তা বাকি বিশ্বের উপর অন্যায় আক্রমণ ও অত্যাচারের অজুহাত হয়ে উঠে।[53] পশ্চিম থেকে আসা বিজ্ঞান কে ইউনিভার্সাল দেখানো হতে থাকে আর অন্যান্য জাতি সমূহের বিজ্ঞান কে দেখা শুরু হয় পৌরাণিক কাহিনী হিসেবে। এইভাবে, বিজ্ঞান বুদ্ধিবৃত্তিক কলোনাইজেশনের একটা অস্ত্র হয়ে উঠে।[54] এই বুদ্ধিবৃত্তিক কলোনাইজেশন মুসলিম বিশ্বের জ্ঞান আহরণের কেন্দ্রীভূত ও সামগ্রিক ব্যাবস্থাকে রিপ্লেস করে এক সেক্যুলার জ্ঞানতাত্ত্বিক ব্যাবস্থা দ্বারা যা বিভিন্নদিকে বিভাজিত, বস্তুবাদী ও রিডাকশনিস্ট ছিল।

প্রগতির নাম দিয়ে কলোনিয়ালিস্ম কেবল বিভিন্ন জাতির উপর আক্রমণকেই জাস্টিফাই করে নাই, সাথে দিয়ে তারা যে রিডাকশনিস্ট ও বস্তুবাদী বিজ্ঞান কে দাঁড়া করাচ্ছিল তা প্রকৃতি ধ্বংসের একটা মাধ্যম হয়ে উঠে এমনকি এটা একাধিক সম্পূর্ণ ইকোসিস্টেমকে পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়।[55] [56]

মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলার মাধ্যমে বিজ্ঞান ও সেক্যুলার জ্ঞানের এই বুঝ নিয়ে আসা হয়। এই সিস্টেম কলোনিয়াল অফিশিয়ালদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় আর মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতাশালীরাও শিক্ষা কে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর ইচ্ছা নিয়ে এই পদ্ধতি গ্রহণ করে নেয়।

কলোনিয়াল শিক্ষানীতি

১৮৩৫ সালে টমাস ব্যাবিংটন ম্যাকলে, একজন ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ সমগ্র ভারতবর্ষের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি সিলেবাস প্রস্তুত করেন যাতে ছিল ‘আধুনিক বিজ্ঞানসমূহ’ আর ইংলিশ। প্রি-কলোনিয়াল ভারতবর্ষ থেকে চলে আসা ট্রেডিশনাল শিক্ষানীতি উৎখাত করতে কলোনিয়াল সরকার ম্যাকলে কে সাপোর্ট দেয়।[57] ১৮৫৭ সালের সিপাহী আন্দোলনের আগ পর্যন্ত এই কারিকুলাম অনুযায়ী শিক্ষা দেওয়া হচ্ছিল।[58] এরপর আরও নতুন বাধ্যবাধকতা চাপানো হয় শিক্ষাকে পুরোপুরি বশীভূত করার উদ্দেশ্যে।

নেপোলিয়নের ৩ বছর শাসনের পর মিশরের প্রাইমারি স্কুলগুলোয় চারুকলা ও জ্ঞানের কিছু শাখার বেসিক বিষয় সমূহ ফ্রেঞ্চে শিখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যেন পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের ফ্রেঞ্চ ভাষার মেডিকাল স্কুলে ভর্তি করানো যায়।[59] আধুনিক মিলিটারি গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে মামলুক ইলিটদের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান খোলার প্ল্যানও হয়েছিল।[60]

অটোমানদের ক্ষেত্রে সেখানে সাম্রাজ্যের ক্ষমতা কমে আসছিল আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অটোমান সাম্রাজ্যের ভিতরে স্কুল স্থাপন করছিল।[61]

ফ্রেঞ্চ কলোনিয়াল সরকার পশ্চিম আফ্রিকায় শিক্ষার উপর ইসলামের প্রভাব কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। সেনেগাম্বিয়া অঞ্চলের শিক্ষার উপর কুরআনের প্রভাব একেবারে কমিয়ে ফেলতে ১৮৫৭ সালে কলোনিয়াল অ্যাডমিনস্ট্রেটর ও জেনারাল লুই লিওন সিজার ফাইদার্বা একাধিক আদেশ জারি করেন যা বছরের বছর অফিশিয়ালদের দ্বারা অনুসৃত হয় । শিক্ষা কে কন্ট্রোল করে তারা সেই কুরআনীয় প্রভাব কে কমিয়ে ফেলতে চায়, যা সে অঞ্চলে ৯০০ বছর ধরে শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে ছিল।[62]

এই প্রক্রিয়া যাতে নতুন নতুন শিক্ষা ব্যাবস্থার আবির্ভাব ঘটে সমগ্র মুসলিম বিশ্ব জুড়ে — এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। প্রথমটা হল — সেক্যুলার শিক্ষা রাষ্ট্র গঠনের একটা অস্ত্র হয়ে উঠা ও সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধি মুসলিম বিশ্বে বেগ পেতে শুরু করে। দ্বিতীয়ত, কলোনিয়াল পিরিয়ডের আগে মুসলিম বিশ্বে থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ব্যাবস্থা মার খেতে শুরু করে। তৃতীয়ত, এই স্কুলগুলো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতো — যেন এমন লিডার বানানো যায় যে এলাকার মুসলিমদের কাছে বিশ্বস্ত এবং সাথে দিয়ে কলোনিয়াল প্রজেক্ট সাপোর্টকারি। এই কারণে, যেখানে কলোনিয়ালরা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক কলোনাইজেশন বন্ধ করত, সেখান থেকে রিফরমাররা, যারা সাধারণত মুসলিম বিশ্বেরই মানুষ, নিজ দেশে মডার্নাইজেশন শুরু করে দিত।

রিফর্মার, মিলিটারি আর মডার্নাইজেশন

অটোমান সাম্রাজ্যে শিক্ষা ব্যাবস্থার মডার্নাইজেশন শুরু হয় ১৭৩৪ সালে যখন সুলতান প্রথম মাহমুদ মডার্ন মিলিটারি স্কুল স্থাপন করেন।[63] মডার্ন মিলিটারি তৈরির বাসনায় কয়েক বছরে আরও অনেক এমন প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। যার ফলাফল হল ১৯শ শতকের তানজিমাত সংস্কার যা তে সেক্যুলার বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।[64] ১৭৮৯ সালের তৃতীয় সেলিমের নিযাম-ই জাদিদ প্রোগ্রাম ঘোষণার মধ্য দিয়ে অটোমান শিক্ষা ব্যাবস্থায় বড় বড় পরিবর্তন আসে।[65] এসব সংস্কারের কমন বৈশিষ্ট্য ছিল পসচিমের অন্ধ অনুকরণ, জামাল আল-দ্বীন আফগানির মত বিভিন্ন চিন্তক যার সমালোচনা করেন।[66]

পশ্চিম আফ্রিকায় ফ্রেঞ্চ শিক্ষা ব্যাবস্থার কিছু জিনিস ইসলামিক সিক্ষা ব্যাবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে ১৯০৮ সালে Médersa of Saint-Louis স্থাপিত হয় এই উদ্দেশ্য নিয়ে যে এখান থেকে এমন স্থানীয় মানুষ বানানো যাবে যে কলোনিয়াল স্টেট এর la mission civilisatrice (সভ্য বানানোর যাত্রা) এর জন্য প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে পারবে।[67]

মিশরের উলামা যেমন আল-জারবাতি এবং হাসান আল-আত্তারের লেখা ডক্যুমেন্ট পড়লে বোঝা যায় যে তারা ফ্রেঞ্চদের মিলিটারি আর বুদ্ধিবৃত্তিক সফলতায় চমৎকৃত হয়ে গিয়েছিলেন।[68] মুহাম্মাদ আলী মিশরের ট্রেডিশনাল মক্তব ও মাদরাসা সিস্টেমের পাশাপাশি সরকার নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয় সৃষ্টি করে।[69] নতুন শিক্ষা ব্যাবস্থা স্থাপন করার জন্য মুহাম্মাদ আলী ইউরোপে শিক্ষার্থী পাঠায়, বিশেষ করে ফ্রান্সে।[70] ১৮৪৪ সালে Egyptian Military School স্থাপিত হয় তাদের জন্য যাদের ফ্রান্সে পাঠিয়েছিল মুহাম্মাদ আলী।

মুহাম্মাদ আলীর পর আলী মুবারাক, আরও একজন বিখ্যাত মিশরীয় রিফর্মার, ফ্রান্সে গিয়ে তাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা স্টাডি করার পর মিশরের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে পরিবর্তন ও মডার্নাইজ করতে চায়।[71] মিশরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ যেমন আল-আযহারের এ বলে সে সমালোচনা করে যে তারা ইতিহাস, ভূগোল ও দর্শনকে কোন গুরুত্বই দেয় না[72] তিনি ইঙ্গিত করছিলেন ফ্রান্সের নতুন শিক্ষাধারার প্রতি। আরও একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হলেন মুবারাকের সময়কার রিফা’আ আল-তাহতাউয়ী, যে নিজেও ফ্রান্সে জীবনের এককাল কাটিয়ে এসেছিল। সে বলেছিল যে প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে সরকার প্রেরিত শিক্ষক থাকা উচিত যে গ্রামবাসীকে ‘সরকারি নীতিমালা’ শিখাবে,[73] যেন তারা ‘হাব্ব আল-ওয়াতান’[74] (রাষ্ট্রের প্রতি ভালোবাসা) শিখে। আল-তাহতাউয়ীর শিক্ষার এই ধারণা যা রাষ্ট্র গঠনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল — প্রদর্শন করে যে শিক্ষার পশ্চিমা মডেল মুসলিম বিশ্বের কিছু ক্ষমতাশালী অঞ্চলের উপর কিরকম প্রভাব ফেলেছিল; বিদ্যালয় ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় পরিচয় শক্তিশালি করে তোলার এই ধারণা ফ্রান্স তার গ্রাম্য জনগণের ব্যাপারে যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তার সাথে প্রায় পুরোপুরি মিলে।[75]

ভারতীয় উপমহাদেশে সায়্যিদ আহমাদ খান Muhammadan Anglo-Oriental College (MAO) (পরবর্তীতে আলীগড় ইউনিভার্সিটি) স্থাপন করেন ১৯শ শতকের মাঝের দিকে, যার মডেল ছিল ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি।[76] ব্রিটেনের শিক্ষা ব্যাবস্তা দ্বারা সায়্যিদ আহমাদ খান বিশালভাবে প্রভাবিত হন। ব্রিটেনের ব্যাপারে তিনি একবার তার সহকর্মীকে বলেছিলেন, “তুমি যদি এখানে আসো…দেখতে পাবে কিভাবে শিক্ষা চালানো হয় আর শিশুদের শিখানো হয়, কিভাবে জ্ঞান অর্জন করা হয় আর সম্মান হাসিল করা যায়”।[77] MAO কলেজের কারিকুলামে মা’কুল সাবজেক্ট যেমন ফিলসফি, অ্যাস্ট্রনমি আর মেডিসিন এর ক্ষেত্রে প্রি-কলোনিয়াল শিক্ষাধারা পরিবর্তন করে ইউরোপিয়ান শিক্ষাধারা সেট করা হয়।[78] এটা ঠিক ছিল এই দিক দিয়ে, যে এটি ভারতীয় মুসলিমদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি নতুন ধারা নিয়ে আসে যার মাধ্যমে জ্ঞানের নতুন নতুন দিকের আবির্ভাব হয় যা ইউরোপে স্টাডি করা হত; আর যা প্রি-কলোনিয়াল জ্ঞানের কিছু বিষয় কে রিপ্লেস করে দেয়। এই সিদ্ধান্তটা এমন বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নেওয়া হয় যে ইউরোপে ডেভেলাপ করা জ্ঞান-বিজ্ঞান, মুসলিম বিশ্বে ও অন্যান্য সমাজে থাকা জ্ঞান-বিজ্ঞান বুঝ থেকে অধিক উন্নত ছিল।

আহমাদ খানের শিক্ষা সংস্কারের সমান্তরালে ১৮৬৬ সালে ভারতীয় উলামার একটি গ্রুপ দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা করে।[79] দারুল উলুম দেওবন্দের কারিকুলাম দারস-ই নিযামি এর একটা রিফর্মড ভার্সন দ্বারা বিশালভাবে প্রভাবিত ছিল।[80] এই দারস-ই নিযামি শিক্ষাধারার জন্য আমাদের ১৮শ শতকের স্কলার মুল্লাহ নিযামুদ্দিন সাহলাভিতে ফিরে যেতে হবে।[81] দারস-ই নিযামির কারিকুলাম অনেক বড় ছিল যা উলুম আল-মানকুল ওয়া উলুম আল-মা’কুল উভয়কে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করে; মূল শিক্ষা ধারায় ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাস্ট্রনমি, মেডিসিন অন্তর্ভুক্ত ছিল।[82] এই মূল কারিকুলামে থাকা উলুম আল-মা’কুল এর প্রধান প্রধান অংশগুলো দেওবন্দী রিফর্মে সরিয়ে দেওয়া হয়[83] এর মূল ফোকাস উলুম আল-মানকুল এ নিয়ে আসা হয়। এই কাজটা কে জাস্তিফাই করার জন্য তারা বলে যে যাদের ‘মডার্ন’ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রয়োজন আছে তারা মাদরাসা সিস্টেমের বাইরের স্কুল-কলেজে গেলেই পারে।[84] এই এটিটিউড দেখায় কিভাবে মুসলিমরা নিজেরাই নিজেদের ট্রেডিশনাল কেন্দ্রীভূত জ্ঞান ব্যাবস্থা কে খণ্ড-বিখন্ডে ভেঙে ফেলে কলোনিয়াল সিস্টেম থেকে আসা সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা ও চিন্তাচেতনার বিজয়ের দ্বার খুলে দেয়। পশ্চিমা জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্য সবকিছু থেকে শ্রেষ্ঠ হওয়া আর কলোনিয়ালদের একটা সিম্পল দাবী থাকে নি; বরং কলোনাইজড জনগণের অন্তরে ভালোভাবে গেথে যায়।[85]

অটোমান সাম্রাজ্য, পশ্চিম আফ্রিকা, মিশর আর ভারতীয় উপমহাদেশের উপরোক্ত উদাহরণগুলো দেখে একজন বুঝতে পারবে যে কিভাবে কলোনিয়ালিস্ম মুসলিম বিশ্বের শিক্ষা ব্যাবস্থার উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। প্রথমে কলোনিয়ালরা মুসলিম বিশ্বের প্রি-কলোনিয়াল শিক্ষা ব্যাবস্থার পরিবরতে সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা স্থাপনের জন্য শক্ত প্রচেষ্টা চালায়। তারপর মুসলিম সংস্কারকরা পশ্চিমা সেক্যুলার ভাবধারার বিদ্যালয় স্থাপন করতে উঠে পড়ে লাগে। নতুন বিদ্যালয়গুলো অবশ্য ইউরোপে ডেভেলাপ করা জ্ঞান-বিজ্ঞান মুসলিম বিশ্বে আনতে সহায়তা করে। তবে, এসব মুসলিম বিশ্বে থাকা কেন্দ্রীভূত জ্ঞান সিস্টেমকে ছোট করে আর রিপ্লেস করে দেয়। একদিকে রিফর্মাররা পশ্চিমা সেকুলার ভাবধারায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সচেষ্ট হয়, অন্যদিকে দেওবন্দী মুভমেন্ট এর মত রিফর্ম মুভমেন্ট গুলো এমন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে যা পাঠ্যক্রম কে সংকীর্ণ করে কেবল উলুম আল-মানকুল এ সীমাবদ্ধ রাখে। এই সংকীর্ণকরণ এর অর্থ ছিল এটা মেনে নেওয়া যে সমাজে আর ইন্টেলেকচুয়াল ডেভেলাপমেন্টে মাদারিস এর কম ভূমিকা রাখা উচিত।

পোস্ট-কলোনিয়াল পিরিয়ডে ওয়েস্টার্ন সেক্যুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের অনুসরণে রিফর্ম চলতে থাকে, গঠন আর বিষয় — উভয় ক্ষেত্রে।। এরই সাথে মাদরাসার ভূমিকা আরও সংকীর্ণ হতে থাকে। এসবকিছু মিলে মুসলিম বিশ্বে শিক্ষার একটা ক্রাইসিস তৈরি হয়।

মুসলিম বিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের একটি অনুসন্ধান

ইউরোপিয়ান কলোনিয়ালিস্ম এর শত শত বছর পূর্বে ইবনু খালদুন লেখে গিয়েছেন — এটাই প্রকৃতির নিয়ম যে বিজিতরা বিজয়ীদের অনুকরণ করবে। এটা এজন্য যে, হয় বিজিতরা অবাক হয়ে যায় বিজয়ীদের দক্ষতা দেখে অথবা ভাবে যে তারা নিজেরা পশ্চাৎপদ যার ফলেই তারা হেরে গিয়েছে। হারের আসল কারণ বের করতে পারে না।[86] এই চিন্তাটা পারফেক্টলি মুসলিমদের ডিফিটিস্ট অ্যাটিটিউড কে ব্যাখ্যা করতে পারে। কলোনিয়াল পাওয়ারের কাছে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে এই হীনমন্যতা শুরু হয় আর এখনও পশ্চিমের অন্ধ অনুকরণের মাধ্যমে এটা চলছে, যা মুসলিম বিশ্বের ডেভেলাপমেন্টের উপর পোস্ট-কলোনিয়াল যুগ থেকে শুরু করে বিস্তর প্রভাব ফেলে আসছে।

ওয়েস্টের অন্ধ অনুকরণের পিছনে রিফর্মার আর সরকারের কারণ হল পশ্চিমের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি আর রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি মুগ্ধতা। তারা আশা করেছিল যে বিদ্যালয়ের সেক্যুলারকরণের মাধ্যমে ওয়েস্টের মত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। এটা কেবল ব্যর্থই হয় নি, বরং এমন বললে কোনোরকম অতিরঞ্জন হবে না যে এই সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা মুসলিম বিশ্বে সমাজ ভাঙন, সংস্কৃতির বিনষ্টকরণ আর ট্রেডিশনাল জ্ঞান ব্যাবস্থার ধ্বংস নিয়ে এসেছে।[87] আল-যীরা দ্বারা ওয়েস্টার্ন সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থার ক্ষতিগুলো তুলে ধরা হয়েছেঃ

মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠার স্বরূপ হচ্ছে আলাস্কায় তাল গাছের বীজ বপন করে এই আশা করা যে তা প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠবে এবং সাথে দিয়ে ফলও দিবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যতসব সমস্যা দেখা দেয়, তার একটি প্রধান কারণ ইসলামী সমাজের ধর্মীয় ভিত্তি আর তার মাঝে প্রতিষ্ঠিত সেক্যুলার পশ্চিমা শিক্ষাব্যাবস্থা[88]

ইসলামী সমাজ ও ওয়েস্টার্ন শিক্ষা ব্যাবস্থার অমিল এমন এক শিক্ষিত গোষ্ঠী সৃষ্টি করে যারা নিজেদের সংস্কৃতি আর বুদ্ধিবৃত্তিক ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন আর এমন এমন লোক সৃষ্টি করে যারা মুসলিম বিশ্বে নিও-কলোনিয়াল পলিসি প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর হয়ে উঠে — দেখাতে চায় যে আসল, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য হতে হলে একটা জিনিসের অবশ্যই অবশ্যই ওয়েস্টার্ন হতে হবে।[89]

এই বুদ্ধিবৃত্তিক কলোনাইজেশনের মাত্রা এতদূর পর্যন্ত চলে যায় যে ইসলামকে পর্যন্ত সেক্যুলার জ্ঞানতাত্ত্বিক গবেষণা প্রক্রিয়ায় পরীক্ষিত করে তারপর উত্তীর্ণ করাতে হয় আর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক লেভেলে ইসলাম কেবল তখনই ভ্যালিডিটি পায় যখন তা পশ্চিমা বোদ্ধাদের দ্বারা বানানো নিয়মকানুন ও ভাবধারার সাথে মিলে।[90] এই সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা কেবল ইসলামী ভাবধারা থেকে প্রাপ্ত সামগ্রিক ও কেন্দ্রীভূত জ্ঞানের বুঝ কে নষ্টই করে নি, সাথে দিয়ে ধর্ম কে, বেশি হলে বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমের একটা আলাদা সাবজেক্ট হিসেবে রেখছে অন্যান্য বিষয় যেমন অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ইত্যাদির সাথে তার সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে। ইসলামী ভাবধারায় ধর্ম কে দেখা হয় এমন ভাবে যে তা নিজের মধ্যে অন্যসব বিষয় কে নিয়ে আসে। প্রতিটা বিষয় আর শিক্ষা প্রক্রিয়ার প্রতিটা দিককে কেন্দ্রীভূত করে নেয়।[91] বিখ্যাত কবি মুহাম্মাদ ইকবাল ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ধর্মের ব্যাখ্যা দেন,

ধর্ম কোন প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় না; এটা কেবল চিন্তা না, এটা কেবল অনুভূতি না, এটা কেবল কর্ম না; এটা একটা পরিপূর্ণ মানুষের প্রকাশ[92]

পশ্চিমের অনন্য বৈশিষ্ট্যঃ সেক্যুলার আর ধর্মীয় এর মধ্যে বিভাজন, যা ইসলাম পরিপন্থি, তার ব্যাপারে কাব্যিক ভাষায় ইকবাল বলেন,

ধর্মহীন বিশ্ব বলতে কিছুই নেই। এতসব পদার্থের প্রাচুর্য আত্মার আত্মবুঝের সুযোগ প্রদান করে কেবল[93]

শিক্ষাগত এই ক্রাইসিস সমাধান করার জন্য গুরুতর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। জ্ঞানের সেক্যুলারকরণের বৈশ্বিক ঐকমত্য বল কে সরানোর জন্য বুঝে শুনে এগোতে হবে অন্যথায় মুসলিম বিশ্ব তার পিছিয়ে যাওয়া ছায়াতেই পড়ে থাকবে আর কখনও বাস্তব কিছু হয়ে উঠতে পারবেনা।[94] ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড এর অন্ধ অনুসরণ মুসলিম বিশ্ব কে নিজস্ব কালচারাল পরিচয়ের বিজ্ঞান ও জ্ঞানের মডেল অনুযায়ী এগিয়ে যাওয়া থেকে ঠেকিয়ে রেখেছে,[95] ঠেকিয়ে রেখেছে ইসলামী ভাবধারা অনুযায়ী নিজের সমাজের উন্নয়ন থেকে। সেক্যুলার শিক্ষা ব্যাবস্থা কে ব্যাবহার করে রাষ্ট্র গঠন ইসলাম পরিপন্থী কেননা আল্লাহ, নাবাউয়ী শিক্ষা, আখিরাতের বুঝ প্রদান ছাড়া সত্য ও সমতার সমাজ তৈরি করা যায় না। জ্ঞানের সেক্যুলার বুঝ এর ফ্যালাসি হচ্ছে মানুষ কখনোই বাস্তবতা পরিমাপের মাপকাঠি হতে পারবে না।[96] কুরআনের নাযিল হওয়া প্রথম আয়াতগুলো দেখে আমরা বুঝি যে সবধরনের সত্য জ্ঞান আসে আল্লাহ থেকে; সুতরাং, সে জ্ঞান, যা আমাদের আল্লাহর সাথে সংযুক্ত করে দেয় না তা চরম ক্ষতি ও পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যাবে।

এ থেকে আমরা বুঝি, জ্ঞানের পুনঃইসলামিকরণ কেবল শত শত বছর আগের সেরা ইসলামী চিন্তাবিদদের কাজের উৎকৃষ্টতা বর্ণনাই নয়, বরং এটা ইসলামী জ্ঞানতত্ত্বের ডেভেলাপমেন্ট যা জ্ঞানের একত্ব সৃষ্টি করে,[97] যেখানে জ্ঞানের প্রতিটি শাখা মৌলিক বাস্তবতা অর্থাৎ আল্লাহর একত্বে (তাওহিদ) ফিরে যায়। ওয়ান মোহ্‌দ নুর ওয়ান দাউদ জ্ঞানের ইসলামিককরণের সেরা সংজ্ঞা দিয়েছেন,

মৌলিকভাবে বলতে গেলে, ইসলামের অধিবিদ্যাগত ভাবধারা, জ্ঞানতাত্ত্বিক ফ্রেমওয়ার্ক আর নৈতিক ও আইনগত নীতিতে ফিরে যাওয়া[98]

২০শ শতকের শেষের দিকে ইসলামী ফ্রেমওয়ার্ক এর ভিতরে শিক্ষা ব্যাবস্থা কিভাবে ডেভেলাপ করা যায় যাতে তা মুসলিম সমাজের জন্য উপকারী হয় তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। নাকিব আল-আত্তাস, সায়্যাদ হোসেইন নাসর আর ইসমাইল আল-ফারুকির মত ইন্টেলেকচুয়ালরা জ্ঞানের পুনঃইসলামীকরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। মুসলিম বিশ্বের শিক্ষাগত সমস্যা গুলো নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক কনফারেন্স হয়েছিল মক্কায় ১৯৭৭ সালে। পরবর্তীতে এ নিয়ে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো কনফারেন্স হয়।[99] যদিও এর পরে অনেক আলোচনা হয়েছে আর কয়েকটা ইউনিভার্সিটিও স্থাপিত হয়েছে (যেমন IIUM), এখনও মুসলিম বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার জন্য আরও অনেক বেশি কাজ করতে হবে। আসলে কেবল মুসলিম বিশ্বের জন্য না, সমগ্র বিশ্বে কলোনাইজেশন কি প্রভাব ফেলেছে তা বুঝতে ও বিশ্লেষণ করতে অনেকগুলো জেনারশন চলে যাবে।[100]

উপসংহার

জ্ঞানের ইসলামিকরণ শিক্ষা, জ্ঞান উৎপাদন আর জ্ঞানতত্ত্বে ইসলামের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা কিছু উপকারী বিতর্ক সৃষ্টি করেছে ঠিক, তবে সাথে দিয়ে এসব জিনিস কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য সমালোচনার সম্মুখীনও হয়েছে। দেখা যায় যে আলোচনাগুলো সাধারণভাবে প্রতিক্রিয়াশীল হয়, পশ্চিমের বিরুদ্ধে লেখা হিসেবে আসে কিন্তু জ্ঞান উৎপাদন আর শিক্ষার ব্যাপারে কিভাবে ইসলামী কনসেপচুয়াল ফ্রেমওয়ার্ক স্থাপন করা যাবে তা নিয়ে কিছু বলে না।[101]

জ্ঞান, সমাজ আর ব্যক্তিত্বের সেক্যুলারাইজেশন পৃথিবীতে অনেক দিক দিয়ে অসংখ্য সমস্যার সৃষ্টি করেছেঃ পরিবেশগত, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাইকোলজিকাল ইত্যাদি। জ্ঞানের ইসলামিকরণ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করা হবে যা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় — জ্ঞানের প্রতি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ফিরিয়ে নিয়ে আসবে যেখানে আধ্যাত্মিক বাস্তবতা ও অধিবিদ্যাগত সত্য জ্ঞানের ফিল্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যা কে বর্তমানে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। যদিও এই ধারণার আগেই ইকবাল চলে যান, ইকবালের নিম্নোক্ত কথা টা জ্ঞানের ইসলামিকরণ এর উদ্দেশ্য পারফেক্টলি বুঝিয়ে দেয়ঃ

মানবতার বর্তমানে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন — মহাবিশ্বের একটি আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা, ব্যক্তিত্বের আধ্যাত্মিক মুক্তি আর আধ্যাত্মিক ভিত্তি থাকা ইউনিভার্সাল শিক্ষার বেসিক যা মানব সমাজের বেড়ে উঠা, চিন্তাচেতনা ও আচার-আচরণের দিকে উদ্দেশ্য করা থাকবে[102]

কলোনিয়াল পিরিয়ডে কিসব পরিবর্তন হয়েছে তার উপর আলো ফেলার মাধ্যমে এটা আশা করা যায় যে বর্তমান আর ভবিষ্যতের শিক্ষাবিদরা শিক্ষা ব্যাবস্থায় পুনরায় ইসলামী ভাবধারা, জ্ঞানতত্ত্ব ও নৈতিকতা আনার প্রয়োজনীয়তা বুঝবে এবং এতে অবদান রাখতে সচেষ্ট হবে। এটাও আশা করা হল যে এই পেপারটা এমন শিক্ষার্থী ও এক্সপার্টদের যারা সাইকোলজি, ব্যাবসা, চারুকলা ইত্যাদি সাবজেক্টর সাথে যুক্ত আছে এটা পুনরায় ভাবতে অনুপ্রেরণা দান করবে যে তারা কোন ভাবধারার মধ্যে কাজ করছে এবং তারা নিজেদের ফিল্ডে ইসলামী চিন্তাচেতনা যুক্ত করার চেষ্টা করবে। আমরা আল্লাহর কাছে দরখাস্ত করি, তিনি যেন আমাদের সেই জ্ঞানে নিয়ে যান যে জ্ঞান তার কাছে ফিরিয়ে নেয় এবং যা আমাদের আত্মাকে দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান করে। আমিন।

— — — — — — — — — —

লেখক পরিচিতিঃ ফয়সাল মালিক ব্যাচেলর্স করেছেন ধর্মে কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে আর মাস্টার্স করেছেন ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো থকে নিয়ার/মিডল ইস্টার্ন সিভিলাইজেশন্স এত উপর। মুসলিম বিশ্বে কলোনিয়ালিস্ম এর উপর তিনি বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং তার রিসার্চ অ্যামেরিকা, ক্যানাডা ও মালয়শিয়ায় উপস্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে তিনি ইকনা রিলিফে মার্কেটিং আর প্রোজেক্ট কোঅরডিনেটর হিসেবে কাজ করছেন।

Reference:

[1] ​http://www.cnn.com/TRANSCRIPTS/0908/13/se.01.html

[2] মাদরাসা এর বহুবচন

[3] Farish Noor, Yoginder Sikand, and Martin van Bruinessen, eds., ​The Madrasa in Asia: Political Activism and
Transnational Linkages ​ (Amsterdam: Amsterdam University Press, 2008), 11.

[4] International Crisis Group (ICG). 2004, October 7. Pakistan: Reforming the Education Sector. Islamabad/Brussels:
International Crisis Group & Arab Human Development Report, 2003, ​Building a Knowledge Societ ​y. New York:
United Nations Development Programme.

[5] For examples of influential academics of the past see Goldziher, Ignaz, “The Attitude of Orthodox Islam toward
the Ancient Science” in ​Studies on Islam ​, ed. Merlin L. Swartz (New York: Oxford University Press, 1981),
185–215 ​ ​& Makdisi, George. ​The Rise of Colleges: Institutions of Learning in Islam and the West ​ (Edinburgh:
Edinburgh University Press, 1981). For examples of more recent writers see Hoodbhoy, Pervez, ​Islam and Science:
Religious Orthodoxy and the Battle for Rationality ​(London & New Jersey: Zed Books Ltd, 1991) & Huff, Toby E.
The Rise of Early Modern Science: Islam, China and the West
​ (Cambridge: Cambridge University Press, 2017).

[6] For examples of historians and academics who have put forth a more nuanced view of Islamic educational
institutes in Muslim civilization, see Ekmeleddin, Ihsanoglu, ​History of the Ottoman State, Society & Civilization ​ (Istanbul: Research Centre for Islamic History, Art and Culture IRCICA, 2002) & Langohr, Vickie
(2005) “Colonial Education Systems and the Spread of Local Religious Movements: The Cases of British Egypt and
Punjab,” ​Comparative Studies in Society and History ​ 47, no. 1 & Robinson, Francis, 1997,
“Ottomans-Safavids-Mughals: Shared Knowledge and Connective Systems,” ​Journal of Islamic Studies ​ 8, no. 2 &
Sahin, Abdullah. 2018. “Critical Issues in Islamic Education Studies: Rethinking Islamic and Western Liberal
Secular Values of Education,” ​Religions ​ 9, no. 11: 335, & Iqbal, Muzaffar. ​The Making of Islamic Science ​ (Kuala
Lumpur: Islamic Book Trust, 2009).

[7] আলাক্ব এর আক্ষরিক অর্থ আটকে থাকা, ফিটাস এর ডেভেলপমেন্টে একটা স্তর বা ভ্রূণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে; দেখুন ​The Qur’an: A New Translation ​, trans. M. A. S. Abdel Haleem (New York: Oxford University Press,
2010), 428.

[8] উদাহরণস্বরূপ, লক্ষ্য করুন যে প্রথম আয়াতের আদেশ কেবল ‘পড়!’ না, বরং আল্লাহর নামে পড়। পড়ার এই আদেশ ৩ নং আয়াতে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে এবং সাথে সাথেই আল্লহর ব্যাপারে একটি বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

[9] Al-Attas, ​Islam and Secularism, ​78 & Cook, ​Classical Foundations of Islamic Educational Thought ​, x &
Muhammad Abdel Haleem and Elsaid M. Badawi, ​Arabic-English Dictionary of Qur’Anic Usage ​(Leiden &
Boston: Brill, 2008), 635.

[10] Al Zeera, ​Wholeness and Holiness in Education, ​63.

[11] Abu Hamid Al-Ghazali, ​Kitab Al-‘Ilm: The Book of Knowledge, Book 1 of the Ihya ‘Ulum Al-Din: The Revival of
the Religious Sciences ​, trans. Kenneth Honerkamp (Louisville: Fons Vitae, 2015), ​ ​xxx.

[12] Cook, ​Classical Foundations of Islamic Educational Thought ​, xxvi.

[13] Kuldip Kaur, ​Madrasa Education In India: A Study of Its Past and Present ​ (Chandigarh: Centre for Research in
Rural and Industrial Development (CCRID), 1990), 6 & Safiur-Rahman al-Mubarakpuri, ​The Sealed Nectar:
Ar-Raheeq-ul-Makhtum. ​ (Riyadh: Darussalam, 2002), 276.

[14] Shawkat Omari, “Towards an Islamic Vision of Parallel Education Institutions,” ed. Hussein Abdul-Fattah and
Fathi Malkawi, in ​The Education Conference Book: Planning, Implementation, Recommendations, and Abstracts of
Presented Papers: A Conference on “Towards the Construction of a Contemporary Islamic Educational Theory”
(Amman: Islamic Studies and Research Association, 1990), 176–177 & Sajid Muhammad Qasmi, ​Madrasa
Education Framework (Dehli: MANAK Publications Pvt. Ltd, 2005),12–15.

[15] George Makdisi, ​The Rise of Colleges: Institutions of Learning in Islam and the West ​ (Edinburgh: Edinburgh
University Press, 1981), 10.

[16] Ibid., 27–28.

[17] Ibid., 31.

[18] Feyyat Gokce, “Minority and Foreign Schools on the Ottoman Education System,” ​e-international journal of
educational research ​ 1, no. 1 (2010), 42 & Ekmeleddin Ihsanoglu, ​History of the Ottoman State, Society &
Civilization ​ (Istanbul: Research Centre for Islamic History, Art and Culture IRCICA, 2002), 2, 371.

[19] Cook, ​Classical Foundations of Islamic Educational Thought, ​ 244.

[20] Ahmed Basheer “Contributions of Muslim Physicians and Other Scholars: 700–1600AC” ​ ​in in ​Muslim
Contributions to World Civilization ​, ed. Syed A.Ahsani, Ahmed Basheer, and Dilnawaz A. Siddiqui (United
Kingdom: International Institute of Islamic Thought, Association of Muslim Social Scientists, 2005), ​ ​73.

[21] Kaur, ​Madrasa Education In India, ​21.

[22] Kaur, ​Madrasa Education In India, ​92 & Langohr, Vickie (2005) “Colonial Education Systems and the Spread of
Local Religious Movements: The Cases of British Egypt and Punjab.” ​Comparative Studies in Society and History
47, no. 1, p. 169.

[23] Vickie Langohr, “Colonial Education Systems and the Spread of Local Religious Movements,” ​Comparative
Studies in Society and History ​ 47, no. 1 (2005), 168, 169.

[24] Ihsanoglu, ​History of the Ottoman State, Society & Civilization Vol.2 ​, p. 247.

[25] Ibid., 247–248.

[26] Cook, ​Classical Foundations of Islamic Educational Thought, ​ XX & Francis Robinson,
“Ottomans-Safavids-Mughals: Shared Knowledge and Connective Systems,” ​Journal of Islamic Studies ​ 8, no. 2
(1997), 152.

[27] Cook, ​Classical Foundations of Islamic Educational Thought, ​ XX & Kaur, ​Madrasa Education In India: A Study
of Its Past and Present, ​170.

[28] Cook, ​Classical Foundations of Islamic Educational Thought, ​ XX.

[29] Al Zeera, ​Wholeness and Holiness in Education, ​ 69.

[30] Ibid., 69.

[31] Ahmed “Contributions of Muslim Physicians and Other Scholars,” 80.

[32] Abu Hamid Al-Ghazali, ​Kitab Al-‘Ilm, ​ 38.

[33] Ibn Khaldun, ​The Muqaddimah: An Introduction to History ​, trans. Franz Rosenthal (Princeton: Princeton
University Press, 2005), 370–390.

[34] Ibid., 376.

[35] Ibid., 422–424.

[36] Ware III, Rudolph T., ​The Walking Qur’an: Islamic Education, Embodied Knowledge, and History in West Africa
(Chapel Hill: University of North Carolina Press, 2014), p. 106.

[37] Ahmed, “Contributions of Muslim Physicians and Other Scholars,” ​ ​87.

[38] Ibid., 76.

[39] Kaur, ​Madrasa Education In India, ​7.

[40] Ihsanoglu, ​History of the Ottoman State, Society & Civilization Vol.2, ​373.

[41] Ibid., 391, 405.

[42] Kaur, ​Madrasa Education In India ​, 34.

[43] Ibid., p. 52 & Hamid Mahmood, ​The Dars-E-Nizami and the Transnational Madaris in Britain ​ (Queen Mary:
University of London, 2012), ​ ​9, 10, 78 & Qasmi, ​Madrasa Education Framework, ​ 49, 55–57.

[44] Ahmed, “Contributions of Muslim Physicians and Other Scholars,” ​ ​77.

[45] Ibid., 81.

[46] Ibid., 80.

[47] Ibid., 80.

[48] Ibid., 82.

[49] Grosfoguel, “The Structure of Knowledge in Westernized Universities,” 78.

[50] Ibid., 79.

[51] Ibid., 79.

[52] Thésée ,“A Tool of Massive Erosion,” 29.

[53] ElMessiri, “The Gate of Ijtihad,” 17 & Hamed Ibrahim “Reflections on Technology and Development: A Cultural
Perspective,” in ​Epistemological BIAS in the Physical & Social Sciences ​, ed. Abdelwahab M. ElMessiri (Herndon:
International Institute of Islamic Thought, 2006), 259.

[54] Rafik Habib, “Modernizing vs. Westernizing the Social Sciences: The Case of Psychology” in ​Epistemological
BIAS in the Physical & Social Sciences ​, ed. Abdelwahab M. ElMessiri (Herndon: International Institute of Islamic
Thought., 2006), 130 & Thésée “A Tool of Massive Erosion,” 33.

[55] Al Zeera, ​Wholeness and Holiness in Education: An Islamic Perspective ​, 86.

[56] বিখ্যাত বোদ্ধা ও কবি মুহাম্মাদ ইকবাল স্বল্প ভাষায় ইউরোপের বিজ্ঞানের এই বিধ্বংসী প্রকৃতি যা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছিল তা তুলে ধরেনঃ “প্রকৃতির মৃতদেহে যেমন অসংখ্য শকুন পড়ে ও প্রত্যেকে একটি করে তার মাংশ খুলে নিয়ে যায়, বিজ্ঞানের সাবজেক্ট হিসেবে প্রকৃতি খুবই কৃত্রিম একটা বিষয়। আর এই কৃত্রিমতা সেই সিলেক্টিভ প্রসেসের ফল, যার প্রতি বিজ্ঞানের একটা নির্ভুলতার মাপকাঠি তৈরি করতে হবে” Muhammad Iqbal, ​The Reconstruction of Religious Thought in Islam ​ (Lahore: Sang-E-Meel Publications, 2010), 44.

[57] Qasmi, ​Madrasa Education Framework, ​69–70.

[58] Ibid., 69–70.

[59] James Dunne-Heyworth, ​An Introduction to The History of Education in Modern Egypt ​ (London: Frank Cass &
Company Ltd, 1969), 98.

[60] Ibid., 100.

[61] Gokce, “Minority and Foreign Schools on the Ottoman Education System,” 48

[62] ​Ware III, ​The Walking Quran: Islamic Education, Embodied Knowledge, and History in West Africa ​, 164, 191,
203.

[63] Kemal Cicek, ​The Great Ottoman-Turkish Civilisation ​ (Ankara: Yeni Turkiye, 2000), p. 657.

[64] Vernon O. Egger, ​A History of the Muslim World Since 1260; The Making of a Global Community. ​(Upper Saddle: Pearson: Prentice Hall, 2008), 309, 339.

[65] Ihsanoglu, ​History of the Ottoman State, Society & Civilization Vol. 2, ​424.

[66] Adel Hussein “Bias in Western Schools of Social Thought: Our Heritage as the Starting Point for Development”
in ​Epistemological BIAS in the Physical & Social Sciences ​, ed. Abdelwahab M. ElMessiri (Herndon: International
Institute of Islamic Thought, 2006), 95.

[67] ​Ware III, ​The Walking Quran: Islamic Education, Embodied Knowledge, and History in West Africa, ​ 196.

[68] Abdur-Rahman Al-Jabarti, ​Napoleon in Egypt: Al-Jabarti’s Chronicle of the First Seven Months of the French
Occupation of Egypt, 1798 ​, trans. Schmuel Moreh (Princeton: M. Weiner Pub., 1993) ​, ​36, 38, 185, 186, 195, 198.

[69] Jeffrey C. Burke, “Education,” in ​The Islamic World ​, ed. Andrew Rippin (London & New York: Routledge Taylor & Franchis Group, 2008), 313 & Bayad Dodge, ​Al-Azhar: A Millennium of Muslim Learning ​ (Washington: The American International Printing Company, 1961), 114 & Mona Russell, “Competing, Overlapping, and
Contradictory Agendas: Egyptian Education Under British Occupation, 1882–1922,” ​Africa and the Middle East,
Comparative Studies of South Asia ​ XXI, no. 1–2 (2001), 50.

[70] Dunne-Heyworth, ​An Introduction to The History of Education in Modern Egypt, ​105 & Ghulam N.
Saqib, ​Modernization of Muslim Education in Egypt, Pakistan, and Turkey: A Comparative Study. ​ (Lahore: Islamic
Book Service, 1983), 84.

[71] Mitchell, ​Colonising Egypt, ​64 & Paula Sanders, ​Creating Medieval Cairo: Empire, Religion, and Architectural
Preservation in 19th Century Egypt (Cairo: American University of Cairo Press, 2008), 33.

[72] Michael J. Reimer, “Contradiction and Consciousness in ʿAli Mubarak’s Description of Al-Azhar,” ​International
Journal of Middle East Studies ​ 29, no. 1 (1997), 62.

[73] Mitchell, ​Colonising Egypt ​, ​ ​109.

[74] John W. Livingston, “Western Science and Educational Reform in the Thought of Shaykh Rifa’a
Al-Tahtawi,” ​International Journal of Middle East Studies ​ 28, no. 4 (1996), 552.

[75] Weber, ​Peasants Into Frenchmen, ​307.

[76] Egger, ​A History of the Muslim World since 1260, ​342.

[77] David Lelyveld, “Disenchantment at Aligarh: Islam and the Realm of the Secular in Late Nineteenth Century
India,” ​Die Welt des Islams ​ 22, no. 1 (1982), 86 & Syed Mahmood, ​A History of English Education in India
(1781–1893) ​ (Calcutta: Baptist Mission Press, 1895), 86, 87.

[78] Lelyveld, “Disenchantment at Aligarh,” 86 & Mahmood, ​A History of English Education in India (1781–1893) ​,
89.

[79] Kaur, ​Madrasa Education In India, ​55 & Mahmood ​The Dars-e-Nizami and the Transnational Madaris in Britain.
11 & Barbara Metcalf, “The Madrasa at Deoband: A Model for Religious Education in Modern India,” ​Modern
Asian Studies ​ 12, no. 1 (1978) 111 & Qasmi, ​Madrasa Education Framework ​, 38, 41.

[80] International Crisis Group (ICG), ​Pakistan: Madrasas, Extremism and the Military ​, (Islamabad/Brussels:
International Crisis Group, 2002), 5 & Kaur, ​Madrasa Education In India, ​121 & Qasmi, ​Madrasa Education
Framework, 67–68.

[81] Muhammad Farooq, “Objectification of Islam: A Study of Pakistani Madrassah Texts,” ​Pakistan Journal of
History and Culture ​ 31, no. 1 (2010), 36.

[82] Ibid., p. 36 & Kaur, Kuldip ​Madrasa Education In India, ​52 & Mahmood, ​The Dars-e-Nizami and the
Transnational Madaris in Britain, ​9, 10, 78 & Qasmi, ​Madrasa Education Framework, ​49, 55–57.

[83] International Crisis Group (ICG). ​Pakistan , ​6 & Metcalf, “The Madrasa at Deoband,” 117–118.

[84] Qasmi, ​Madrasa Education Framework, ​44.

[85] Thésée, “A Tool of Massive Erosion,” 34.

[86] Ibn Khaldun, ​The Muqaddimah, ​ 116.

[87] El-Mously, “Reflections on Technology and Development,” 250–251.

[88] Al Zeera, ​Wholeness and Holiness in Education, ​139–140.

[89] AbdulHamid A. Sulayman, ​Revitalizing Higher Education in the Muslim World ​ (Herndon: International Institute
of Islamic Thought, 2007), 10 ​ & ​Al Zeera, ​Wholeness and Holiness in Education, ​55, 134–135.

[90] Wan Mohd Nor Wan Daud, ​Islamization of Contemporary Knowledge and the Role of the University in the
Context of De-Westernization and Decolonization ​ (Kuala Lumpur: Penerbit UTM Press, 2013), 7 & ElMessiri “The
Gate of Ijtihad,” 19, 20, 50, 51.

[91] Abdul Haq, ​Educational Philosophy of the Holy Quran ​, 183.

[92] Iqbal, ​The Reconstruction of Religious Thought in Islam, ​10.

[93] Ibid., 136.

[94] Abdelwahab M. El-Messiri, “Introduction,” in ​Epistemological BIAS in the Physical & Social Sciences ​, ed.
Abdelwahab M. El-Messiri (Herndon: International Institute of Islamic Thought, 2006), p. xix.

[95] Habib, “Modernizing vs. Westernizing the Social Sciences,” 127.

[96] El-Mously, “Reflections on Technology and Development,” 258.

[97] Al Zeera, ​Wholeness and Holiness in Education, ​xxv.

[98] Daud, ​Islamization of Contemporary Knowledge, ​18.

[99] ​Ashraf, Sayyid Ali, “Islamic Education: Evaluation of the Achievements of Previous Conferences,” ed. Hussein
Abdul-Fattah and Fathi Malkawi, in ​The Education Conference Book: Planning, Implementation, Recommendations,
and Abstracts of Presented Papers: A Conference on “Towards the Construction of a Contemporary Islamic
Educational Theory” ​ (Amman: Islamic Studies and Research Association, 1990), 73–74.

[100] Thésée, “A Tool of Massive Erosion,” 35.

[101] See ​Sahin, Abdullah. 2018. “Critical Issues in Islamic Education Studies: Rethinking Islamic and Western Liberal Secular Values of Education,” ​Religions ​ 9, no. 11: 335. & Henzell-Thomas, Jeremy & Sardar, Ziauddin ​Rethinking Reform in Higher Education: From Islamization to Integration of Knowledge ​(Herndon: International Institute of Islamic Thought, 2018).

[102] Iqbal, ​The Reconstruction of Religious Thought in Islam, ​156.

Source:

https://tinyurl.com/y2z5jeqs

--

--

Arman Firman

I focus on History of Science, Philosophy and Theology and its relationship with Islam. I also write on Western Study of Islam and Orientalism.